সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই মানুষ হিসাব নিকাশের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে আসছে । তখন গণনার জন্য নানারকম উপকরণ ব্যাবহার করা হতো যেমন - হাতের আঙুলের গিট, নুরি পাথর, কাটি, দড়ির গিট, দেয়ালে বা মাটিতে দাগ কাটা ইত্যাদি ব্যাবহার করা হতো। আর সেই গণনার ধারণা থেকেই প্রথম সংখ্যা ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনূভব হয়েছিল।
সভ্যতার শুরুর দিকে মানুষের গণনার জন্য বড় সংখ্যার প্রয়োজন হতো না। তারপর আস্তে আস্তে মানব সভ্যতার বিকাশ ঘটতে থাকে । তাদের কৃষিকাজ এবং পশুপালনের দিকে অগ্রগতি হয়। যার ফলে গণনার জন্য তাদের বড় সংখ্যর প্রয়োজনীতা দেখা দেয়। আর তার জন্য দেয়ালে দাগ কেটে যে গণনার পদ্ধতি চালু ছিলো সেটা কিছুটা উন্নত করার প্রয়োজন হলো। যা বর্তমানে আমরা ট্যালি হিসেবে জানি। খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ বছর আগে সুমেরীয় ও সমসাময়িক অন্যান্য সভত্যার মানুষ মাটিতে দাগ টেনে অনেক বড় সংখ্যা হিসেব করার জন্য যে পদ্ধতি ব্যাবহার করতো তাকে ট্যালি বলা হয়।
ট্যালি পদ্ধতি।
মিশরীয়রা তাদের গণনার জন্য হায়ারোগ্লিফিক্স পদ্ধতি ব্যাবহার করতো। আমরা জানি মিশরীয়রা অনেক বড় বড় স্থাপনার কাজ করেছে , যার মধ্যে অন্যতম হলো পিরামিড। যার ফলে তাদের গণনার জন্য তাদের আরো বড় সংখ্যার প্রয়োজন হয়। তাই তারা খ্রিস্টপূর্ব ৩৪০০ সালে হায়ারোগ্লিফিক্স চিহ্ন বা সংখ্যা পদ্ধতির ব্যাবহার শুরু করে। তারাই সর্বপ্রথম সংখ্যা বা চিহ্নের প্রচলন করে।
হায়ারোগ্লিফিক্স পদ্ধতি।
হায়ারোগ্লিফিক্স পদ্ধতি আবিস্কারের পরে গণনার কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যায়। এর মাধ্যমে অনেক বড় বড় সংখ্যাকে সহজেই প্রকাশ করা যেত। আর তখনই রোমানরা তাদের নিজস্ব বর্ণমালার মাধ্যমে রোমান সংখ্যা প্রচলন শুরু করে। খ্রিস্টপূর্ব ৩৪০০ সালের দিকে এই পদ্ধতির প্রচলন শুরু হয়। তারা ১-১০ পর্যন্ত সংখ্যা বোঝানোর জন্য বিভিন্ন হরফ ব্যাবাহার করতো।
এই রোমান পদ্ধতির সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। এখনো অনেকক্ষেত্রে এই পদ্ধতির ব্যাবহার দেখা যায়।
রোমান পদ্ধতি।
খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ শতকে ব্যাবলনীয় সভ্যতায় ষাটভিত্তিক একটি সংখ্যা পদ্ধতি ব্যাবহার করা হতো। এই পদ্ধতি এখনো আমরা গণনার জন্য ব্যাবহার করি। যেমন- ৬০ সেকেন্ডে ১ মিনিট বা ৬০ মিনিটে ১ ঘন্টা।
ব্যাবলনীয় গণনা।
উপরের আলোচিত সবগুলো পদ্ধতিতেই কাজ চালানো সম্ভব হলেও অনেক বড় সংখ্যা প্রকাশ করা যেত না। এই সকল সংখ্যা পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল শূন্যের ব্যাবহার না থাকা। শূন্যের ব্যাবহার না থাকলেও যে তাদের শূন্যের সম্পর্কে ধারণা ছিল না তা কিন্তু নয়। মিশরীয়রা হিসাবে ব্যালান্স না থাকলে 'নফর' বা 'শূন্য' দিয়ে প্রকাশ করতো। আদিকালে ভারতীয়রা কোনো কিছু না থাকা বোঝাতে শূন্য ব্যাবহার করতো। তবে শূন্যকে সরাসরি সংখ্যা হিসেবে সফলভাবে ব্যাবহারের কৃতিত্ব প্রাচীন ভারতীয় গণিতবিদদের। খ্রিস্টপূর্ব নবম শতাব্দীর দিকে ভারতে বাস্তব সংখ্যা দ্বারা হিসাব নিকাশ করতে শূন্য ব্যাবহার করা হতো।
শূন্য।
বর্তামানে আমরা যে সংখ্যা পদ্ধতির মাধ্যমে হিসাব নিকাশ করি তা হলো দশভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি। আর এই দশভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতির ধারণা এসেছে আমাদের দুহাতের দশটি আঙুলের উপর ভিত্তি করে। খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ সালের দিকে ভারতবর্ষে দশভিত্তিক সংখ্যার প্রচলন শুরু হয়। এই পদ্ধতিটি আধুনিক হওয়ার এবং এর মাধ্যমে হিসাব নিকাশ সহজ হওয়ায় এটি খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে যায়।